আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নরসিংদীতে বোরো ধান চাষে ব‍্যস্ত সময় পার করছে জেলার কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদীর মাঠগুলোতে বোরো আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। শিশির ভেজা সকাল থেকে সন্ধ‍্যার পূর্ব সময় পর্যন্ত মাঠে মাঠে বীজতলা থেকে চারা উঠানো, চারা রোপনে ব‍্যস্ত থাকতে দেখা যায় কৃষকদের।বিগত বছরগুলোতে জেলায় বোরো আমন ধানের ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় চলতি বোরো আমন চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন উৎসব শুরু হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমি, উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন।চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নরসিংদীর সদর উপজেলায় ৮৫ ২০ হেক্টর, পলাশ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮১ হেক্টর, শিবপুর উপজেলায় ১০ হাজার ১৬৭ হেক্টর, মনোরদী উপজেলায় ১১ হাজার ১৪৯ হেক্টর, বেলাব উপজেলায় ৫ হাজার ৮৪১ হেক্টর ও রায়পুরা ১৬ ৮৮২ হেক্টর।

এ পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪৫ ভাগ অর্থাৎ ২৫ হাজার ৪ শত ৯২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। বোরো ধান রোপণের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বোরো ধান চাষের পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশা করছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

চলতি বোরো মৌসমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো ফলন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আরও বেশী উৎসাহ নিয়ে বোরো চাষের ফলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশা করছেন নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে জেলার চরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে বোরো আমন ধান চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

যান্ত্রিক কৃষি যন্ত্র ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষ ও মই দেওয়ার কাজ । কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ, ডোবা ও নদীতে পাম্প স্থাপন করে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে চলতি বছরে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার অনেক কৃষকরা।

কাক ডাকা ভোরে ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে শরীরে হালকা শীতের পোশাক জড়িয়ে, মাথায় গরম কাপড় পড়ে বীজতলা থেকে ধানের চারাগাছ তুলতে ব্যাস্ত রয়েছেন শ্রমিকেরা। কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কেউ আবার জৈব সার দিতে ব্যস্ত। কেউ আবার সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ বা পাম্পের জন্য ঘর তৈরি করছেন। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে তা রোপণের জন্য মাথায় করে জমিতে নিয়ে যাচ্ছেন । সব মিলিয়ে বোরো আমন ধান রোপণের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। নরসিংদীর সর্বত্রই বোরো চাষাবাদের উৎসব বিরাজ করছে।

মহিষাশুরা এলাকার বোরো চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত বছর বোরো চাষ করে দাম ভালো পেয়েছিলাম। এবারও সেই আশায় সাড়ে সাত বিঘা জমি বোরো ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছি। দুই তিন দিনের মধ্যেই ধান রোপণের কাজ শেষ করতে পারবো।

গণেরগাও এলাকার বোরো চাষি জয়নাল বলেন, গত মৌসুমে উফসী ও হাইব্রিড জাতের বোরো রোপণ করে ধানের ভালো ফলন পেয়েছিলাম সেই সাথে বাজার দর ভালো থাকায় ভালো থাকা মোটামুটি লাভের মুখ দেখেছিলাম। এবছর শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলেই বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছি।

নাগরিয়া কান্দি এলাকার ফিরোজ মিয়া বলেন, বোরো মেসৈুমের শুরুতে কোল্ড ইনজুরির কারণে বীজ তলার অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। কোল্ড ইনজুরি থেকে চারা রক্ষার্থে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বীজতলার চারা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই জমিতে রোপণ করা জন্যে বীজতলা থেকে চারা তোলা শুরু করেছি।

করিমপুর এলাকার শুক্কুর আলী নামে এক বর্গা চাষী বলেন, গত বছর ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করে বেশ লাভবান হয়েছিলাম। জমি চাষাবাদ খরচ ও সারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবছর মাত্র ৩ বিঘা জমি বোরো চাষ করছি।

তিনি বলেন, আমার নিজের কোন জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষ করেই কোন রকমে খেয়ে পুড়ে বেঁচে আছি। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চরের ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর ফলে আবাদযোগ্য জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া শ্রমিকের মজুরি ও কৃষি সামগ্রীর দাম লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকায় কৃষিকাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এ অঞ্চলে কাজ করতে আসা কৃষি শ্রমিক হেমায়েত উল্লাহ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার বড় ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে তাই পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে এই এলাকায় বোরো ধান লাগাতে এসেছি। এখানে আমাদের এলাকার তুলনায় পারিশ্রমিক অনেক বেশি পাওয়া যায়। ধান রোপণ করে একেকজন শ্রমিক থাকা খাওয়া ছাড়া দৈনিক ৪ থেকে ৫ শত টাকা মজুরি পাই। এতে কোনরকম সংসার চলে যায়।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক, কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ধানের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। নরসিংদী জেলায় বিরি ধান ৮৮, ৮৯, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ১০০ এ প্রজাতির ধানের আবাদ বেশী হয়। তাছাড়া বোরো হাইব্রিড ও স্থানীয় প্রজাতির বোরোর আবাদও করা হচ্ছে। এবারও কাঙিখত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...