নিজবপ্ প্রতিবেদক
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার কলেজ পড়ুয়া ছেলে তরিকুল ইসলাম তৌকির (১৯) এবং মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব (১৯) নামে দুই তরুনকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা পুলিশ। গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে মাদকদ্রব্য ইয়াবার চালান নিয়ে নরসিংদী আসার পথে বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাশের পুলিশ বক্সের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে তৌকিরের বয়স কম দেখিয়ে নাবালক সাজিয়ে আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনলেও এখনও কারাগারে হাজতবাস করছে রাকিব।
গ্রেফতারকৃত তরিকুল ইসলাম তৌকির শিবপুর পৌর এলাকার পশ্চিম পাড়া মহল্লার কাজল ভূঁইয়া ও শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে। এছাড়াও তৌকির শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন ভুঁইয়ার ভাতিজা। সে তার মায়ের প্রতিষ্ঠিত হাজী আফছার উদ্দিন ভূইয়া সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অপর মো. রাকিবুল ইসলাম একই মহল্লার ( তাপসী রাবেয়ার বাড়ির সামনের বাড়ি) রুহুল আমিনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও বাকলিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে তৌকির দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদক কারবারের সাথে জড়িত রয়েছে। সে একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে শিবপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন সে। এজন্য প্রায় সময় কক্সবাজার আসা যাওয়া করে তৌকির। বরাবরের মতো গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াবার একটি চালান নিয়ে কক্সবাজার থেকে নরসিংদীর শিবপুরে আসার পথে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা পুলিশ ইয়াবাসহ তৌকির ও তার এক সহযোগি রাকিব নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা রজু করা হয়েছে। যার মামলা নং ১৮ তারিখ : ১৬/০১/২০২৩ ইং। পরে তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামী তৌকিরের চতুর মা শিবপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলের বয়স ১৯ এর স্থলে তা কমিয়ে ১৭ বছর দেখিয়ে নাবালক সাজিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেয়। ছেলে তৌকিরকে আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনলেও ছেলের সহযোগি রাকিব আজও কারভোগ করছেন।
এ ব্যাপারে গত শুক্রবার সরজমিনে শিবপুর পৌর এলাকায় ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, 'ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে তৌকির প্রতি মাসে দু-একবার করে কক্সবাজারে চলে যায়। তবে সেখানে কেন সে যায় তা আমরা জানতাম না। তবে শুনেছি সে নাকি এলাকায় মাদক কারবারের সাথে জড়িত। অবশেষে কথাটার সত্যতা মিলল।'
অপর এক ব্যক্তি বলেন, " তবে যাই বলেন ভাই দুইজন একসাথে ধরা পড়ছে অথচ নিজের ছেলে বইল্যা ভাইস চেয়ারম্যান ম্যাডাম খালি একজনকে জামিনে ছাড়াইয়া আনলেন। অথচ একই বয়সী তার ছেলের সাথের ছেলেটা এখনও ভিতরে থাইক্যা আকাশের তাঁরা গুণতাছে"।
এ ব্যাপারে কথা বলতে তৌকিরের মা শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
"বিশ্বাস করেন আমার ছেলে নির্দোষ। আপনারও হয়তো ছেলে আছে। তাই ওই কথাটা পত্রিকায় লিখে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।" পরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য এ ভাবেই কাকতি-মিনতি জানান।
এদিকে ছেলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি এলাকায় যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য সকল অপচেষ্টা চালায় মা উপজেলা পরিষদের বাইক চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া। কিন্তু তার সে চেষ্টাব্যর্থ হয়। ছেলেকে জামিনে মুক্ত করলেও তার সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা রাকিব কারাহাজতে থাকায় বিষয়টি এলাকায় এক কান দুই হতে হতে বর্তমানে 'টক অব শিবপুর' এ পরিণত হয়েছে।
মামলার বাদী বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল উদ্দিন বলেন, আমরা খবর পাই কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমূখী হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে দুই ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের চালান নিয়ে যাচ্ছে। পরে গোপনে ওই সংবাদের ভিত্তিতে শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাশের পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ঢাকা মেট্রো ক ১৫ ৭৯৬০ এই নাম্বার প্লেটের হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে চৌকির ও রাকিব নামে দুই তরুণের পেন্টের পকেটে নীল জিপারের ভিতরে ৫০ টি করে মোট ১০০টি পাওয়া ইয়াবা টেবলেট পাওয়া গেলে তাদেরকে আটক করা হয়।
এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি ভোরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনে একটি যাত্রীবাহী বাসে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০০ পিছ ইয়াবাসহ তৌকির ও রাকিব নামে দুই তরুনকে আটক করে চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এই মামলায় তদন্ত চলমান রয়েছে
সম্পাদকঃ শেখ আব্দুল জলিল, প্রধান সম্পাদকঃ শেখ শহীদ কায়সার, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ উম্মে দিল আফসানা
সহ সম্পাদকঃ জান্নাতুল ফেরদাউস, বার্তা সম্পাদকঃ মোঃ আশিকুর রহমান সৈকত।
Office: Holding #535/1/A, Flat No:4B. South Monipur, Mirpur -1216 Dhaka, Bangladesh.
E-mail: narsingdipost@gmail.com Editor: 01736065708
Copyright © 2024 Narsingdi Post. All rights reserved.