আজ ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডিমলা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভূল ও ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নপত্র দিয়ে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা সমাপ্ত

 

ইব্রাহিম সুজন, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ

সারা দেশে শুরু হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট ক্লাষ্টার, খগাখড়িবাড়ি ক্লাষ্টার এবং দক্ষিণ বালাপাড়া ক্লাষ্টারে গত বৃহস্পতিবার (১৮মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা, যেখানে প্রশ্নপত্রে ছিলো অসংখ্য ত্রুটি। বিভিন্ন শব্দের বানানে ছিলো অসংখ্য ভূল।

(২২মে) ইংরেজী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রশ্নপত্রে ছিলো অসংখ্য ভুল । পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি সিন কম্প্রিহেনশন ছিল অর্ধেক, যেখানে পুরোটাই থাকার কথা। বাচ্চাদের অভিযোগ ছিল যে প্রশ্ন হয়েছে পুরো কম্প্রিহেনশন থেকে অথচ প্রশ্নপত্রে কম্প্রিহেশন দেওয়া হয়েছে অর্ধেক।

(২১মে) অনুষ্ঠিত গনিত প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের সাথে মিল নেই একাধিক উত্তরের। অধিকাংশ প্রশ্নপত্রে ভুল নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট ক্লাষ্টারের প্রায় ২৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০০ শিক্ষার্থী, বালাপাড়া ক্লাষ্টারের প্রায় ৪২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩০০ শিক্ষার্থী এবং খগাখড়িবাড়ি ক্লাষ্টারের প্রায় ২৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০০ শিক্ষার্থী । অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত প্রায় সব প্রশ্নপত্রই দেখা যায় ভুল।
প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন! যা নিয়ে অভিভাবক ও সুশীল সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

যেখানে প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হতে হবে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই। শিশুদের কচি মনে প্রকৃত শিক্ষার বীজটা বপন করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার প্রারম্ভিক পর্যায়। একবার ভুল দিয়ে শুরু করে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে আবার সেটি শোধরানোর সময় পাওয়া কঠিন।

প্রাথমিক অবস্থায় গুণগত, মানসম্পন্ন ও সঠিক শিক্ষাটাই দেয়া উচিত। অন্তত এ ক্ষেত্রে এতটুকু ছাড় দেয়া মানে, সমৃদ্ধ জাতিগঠনে ঠিক ততটুকুই পিছিয়ে পড়া। প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে সব শিক্ষার মূল ভিত্তি। সেখানে যদি এত বড় ভুল হয় তাহলে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হবে বলাবাহুল্য ।

রামডাঙ্গা মাঝিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্য রায় জানান, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রশ্নপত্রে সব বিষয়ে ছিলো অসংখ্য ভুল । যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করছে তাদের আরো মনযোগী হওয়া উচিৎ।

ডিমলা উপজেলার এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, সরকারি স্কুলের প্রশ্নপত্রে যদি এতো ভুল হয় তাহলে শিশুরা পিছিয়ে যাবে । আগামীতে সরকারের স্মাট বাংলাদেশ গড়ার আন্তরায় হয়ে দাড়াবে।

নাম নাপ্রকাশে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, যেখানে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জন্য আলাদা কমিটি থাকার কথা থাকলেও আমাদের উপজেলায় সেটি মানা হয়নি। আবার কিছু কাষ্টারে প্রশ্নপত্র আবার প্রেসে ছাপানোর হয়েছে, যা শিক্ষা নিয়মে নেই। আবার কোথাও হয়েছে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা কোথাও ৬০ নম্বরে। বরং এটির জন্য কয়েকজন এটিও ( সহকারী শিক্ষা অফিসার) দ্বায়ী, কারণ তারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কয়েকটি কাষ্টারে মধ্যে একজন শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও সরবরাহ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুর হাট ক্লাষ্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব ফিরোজুল আলম জানান, সরকারি নিদর্শনা দেড়িতে হওয়ায় প্রশ্নপত্র তৈরিতে কম সময় থাকায় প্রশ্নপত্রে কিছুটা ভুল হয়েছে। আমরা শিক্ষকদের মিটিং সময় বলেছি যাতে ছাত্র-ছাত্রী ভুল গুলো সঠিক করে দেন।

জানা যায় প্রশ্নপত্র প্রণয়নে বাবুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো আজিজুল হকের নিকট মুঠোফোন জানতে চাইলে, তিনি বলেন কম্পিউটার অপারেটর কম্পোজ করতে কিছুটা ভুল হয়েছে। প্রশ্নপত্র তৈরিতে আপনি একাই কেন? জানতে চাইলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে স্কুলে গেলে তেনাকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করেও কোন সারা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদের নিকট জানতে চাইলে, তিনি বলেন এ বিষয়ে আমার কোন করার নেই। এটা এটিও (সহকারী শিক্ষা অফিসারদের) কাজ তারা কোথায় করেছেন, সেটা আমি জানি না। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক যদি আমাদের শিক্ষা খাতে এমন অবস্থা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কোথায় গিয়ে শিখবে,আমি বিষয়টি দেখছি।

 

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...