আজ ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান শিক্ষকের ভুলে স্বপ্নভঙ্গ শারীরিক প্রতিবন্ধী জয়দেব সহ ৩ জনের, দিতে পারলেন না এসএসসি পরিক্ষা!

 

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ

‌‌‘২০২০ সালের ক্লাস এইটে আমি অটো পাস করি। সেসময় আমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য হেড স্যারকে টাকা দিয়েছি কিন্তু টাকার রশিদ পাইনি। গত ছয় মাস আগে জানতে পারি যে আমার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এরপর থেকেই স্যারকে বলতেছি দেখেন বিষয়টা, রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন আমি পরীক্ষা দিতে চাই। এটা আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্যার বলেছিল বাবা তুমি কোন টেনশন করোনা এটা হবেই। আমি চেষ্টা করতেছি তুমি তোমার মতো পড়াশোনা করো। এখন শেষ সময়ে আজকে আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না। একসঙ্গে পড়ে বন্ধুদের সাথে পরীক্ষা দেওয়া হলো না। আমার যে কি কষ্ট টা লাগতেছে সেটা আমি বুঝতেছি। এ কষ্ট মুখে বলে বোঝানো যাবেনা। আমার বন্ধুরা পরীক্ষা দিতেছে, তাদের সাথে আমি পরীক্ষা দিতাম। কিন্তু আজকে আমাকে বাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিক। রোববার(৩০এপ্রিল) শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তার। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভুলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি আশিক। এরআগে শনিবার সারাদিন প্রবেশপত্রের জন্য অপেক্ষা করেও না পেয়ে রাতে সড়ক অবরোধ করে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে গভীর রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার তাদের বাড়িতে প্রবেশপত্র পৌঁছে দেওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ১৫ শিক্ষার্থী। তবে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় আশিকসহ তিন শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি।

জানা গেছে, নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল ৪৯ জন। তবে শনিবার পর্যন্ত ১৮ জন পরীক্ষার প্রবেশ পত্র না পেলে সকাল থেকে স্কুলের বারান্দায় অবস্থান করেন ১৬ শিক্ষার্থী। সকাল পেরিয়ে রাত হলেও পরীক্ষার প্রবেশ পত্র না পাওয়ায় রাস্তা অবরোধ করেন তারা। রাস্তা অবরোধের সময় ওই শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয় অভিভাবক ও তাদের সহপাঠিরা।

আশিক বলেন, গত ১৫ দিন আগে থেকে স্যার বলতেছে আমি যে রেজিস্ট্রেশন করছি তার প্রমাণ দেও। আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নাই। আমার কাছ থেকে যে উনি টাকা নিয়েছে তখন তিনি কোনো রশিদ দেননি আমায়। আমার সাথে আরও দুই বন্ধুর সমস্যা হয়েছে। তাদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কিন্ত পরীক্ষা দিতে না পেরে আমার মতো বাড়িতে অসহায় হয়ে বসে আছে। আমি এটার সুষ্ট বিচার চাই। দুই বছর যাবত যে আমি স্কুলে পড়লাম। স্যার তখন বললো আমার এটা হবে টেনশন করা লাগবে না। এখন শেষ সময়ে বলতেছে আমি তোমার সমাধান দিতে পারলাম না। আমি চাই এই স্যার যেনো এই স্কুলে আর থাকতে না পারে প্রশাসন যেনো সেরকম ব্যবস্থা নেয়। আমার আজকে সমস্যা হয়েছে কাল স্কুলের ছোট ভাই-বোনদের কথা চিন্তা করা উচিৎ। তাদের সাথে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। এরকম ঘটনা যেনো না ঘটে সেজন্য এই স্যারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আশিকের বাবা রবিউল ইসলাম  বলেন, আমার ছেলে ক্লাস সিক্স থেকে ওই স্কুলে পড়েছে। ক্লাস এইটে উঠে রেজিস্ট্রেশনও করলো কিন্তু সেটা নাকি হয়নি। কেনো হইলোনা জানতে চাইলে হেড মাস্টার বলেছিল সমস্যা নাই টেনশনের কিছু নাই সমাধান হবে। এভাবে করতে করতে পরীক্ষা চলে আসলো। এরমধ্যে যখন যা চাইছে দিছি। এখন শুনতেছি যে আর পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। আমার ছেলেটার জীবনটা যে ওরা নষ্ট করলো এর দ্বায়টা কে নিবে। আমি তো একজন গবির মানুষ। আমি কত কষ্ট করে আমার ছেলেকে লেখাপড়া করাইছি সেটা তো আমি জানি। আমি এর উচিৎ বিচার চাই।

জয়দেব নামে আরেক শিক্ষার্থী  বলেন, আমি একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী ছাত্র। প্রবেশ পত্র না পাওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। বন্ধুরা সবাই পরীক্ষা দিলো আমি বাড়িতে বসে ছিলাম। এতোদিন কষ্ট করে পড়াশোনা করে আজ পরীক্ষা দিতে পারলাম না শুধু মাত্র হেড স্যারের গাফিলতির কারনে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের জীবন এভাবে নষ্ট করার জন্য স্যারের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

জয়দেবের বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন,আমার দুই ছেলে এক সাথে ওই স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার কথা,প্রধান শিক্ষক আমার দুই ছেলের ফরম পূরণের জন্য (৫২০০) টাকা নিয়েছে,আমার এক ছেলে পরিক্ষায় অংশ নিতে পারলেও, আমার শারিরীক প্রতিবন্ধী ছেলে জয়দেব পারেনি,প্রধান শিক্ষক বলছে তার ফরম পূরণ হয়নি।আমার ছেলের জীবন নষ্ট করার জন্য আমি ওই শিক্ষকের সঠিক বিচার চাই ।

এদিকে সারাদিনের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুললেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৫ শিক্ষার্থীর কেউই নিতে পারেননি ভালো ভাবে প্রস্তুতি।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার  বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি তেমন নিতে পারেনি তবুও পরীক্ষা খারাপ হয়নি। তবে স্যার যদি আমাদের এরকম হয়রানির মধ্যে না ফেলতো অনেক ভালো পরীক্ষা হতো।

জেসমিন আক্তার নামে আরেক পরীক্ষার্থী  বলেন, সারাদিন রাতের ঝামেলার পর পরীক্ষা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম। তারপর রাতে ঘুম হয়নি। পরীক্ষার খাতায় তেমন ভালো লিখতে পারিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার বলেন, গতকাল রাতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তাদের আশ্বস্ত করি প্রবেশপত্র দেওয়ার। পরে সবার চেষ্টায় রাতেই তাদের কাছে প্রবেশপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তারা পরীক্ষা দিতে পেরেছে। তবে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারনে তিন জনের প্রবেশ পত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ  বলেন, এবিষয়ে তদন্ত করে ওই শিক্ষকের দোষ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...