আজ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লালমনিরহাটে সিন্ডিকেটের হাতে কাঁচা বাজার জিম্মি!

 

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।

জীবজগতের প্রতিটি জীব তথা প্রাণীকেই খেয়েপরে জীবনধারণ করতে হয়। মানুষ জন্মের পর থেকেই বাচার তাগিদে তার প্রয়ােজনীয় দ্রব্য স্থিতি করতে শিখেছে। সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে আর দ্রব্যের প্রয়ােজনীয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলােকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ চাহিদাগুলাে পূরণের জন্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যই হচ্ছে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্য। যা না হলে মানুষের একদণ্ডও চলে না। তাহলে খুব সহজেই অনুমেয় করা যায়, কোনাে একটি দ্রব্যের মূল্য যদি ক্রেতার সাধ্যের বাইরে চলে যায় তাহলে তার জীবন অনেকাংশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রেক্ষাপটের দিকে একটু সচেতন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই দেখা যায় নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের কী রকম উর্ধ্বগতি। খাওয়াপরার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি দ্রব্যসামগ্রীর দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে।

খুব সহজেই এর কারণগুলােকে চিহ্নিত করা যায়। ব্যবসায়ী শ্রেণির মুনাফালােভী মনােভাবকেই এর জন্য দায়ী করা যায়। এছাড়া আরও ছােট ছােট কিছু কারণ রয়েছে, তবে সেগুলাে গৌণ। মজুদদাররা দ্রব্য গুদামজাত করে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেল কিনা সে দিকে তাদের খেয়াল খুব কমই। তাদের ধারণা যেহেতু দ্রব্যটি মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম সেহেতু যেকোনাে উপায়ে দ্রব্যটি তারা ক্রয় করতে বাধ্য। আর সরকারের অর্থ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে কোনাে জোড়ালাে পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আর একটি কারণ হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি। সরকারি চাকরি জীবীরা যে হারে বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকেন দ্রব্যের মূল্য সে হারে না বেড়ে বরং জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে।

রাজধানী থেকে শুরু করে সমস্ত দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর প্রতিনিয়ত মূল্য বৃদ্ধি ঘটেই চলছে। এ যেন নিত্যনৈমিক্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সরকার বলেন, প্রশাসন বলেন, কারোই এদিকে খেয়াল নাই। সাধারণ জনগণ নির্দৃিষ্ট ব্যবসায়ির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজীয় প্রায় প্রতিটি জীনিস এক মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি ২০/৩০ টাকা বেড়েছে। কাচা বাজারে সবজি যোগান পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করলা- ৬০/৬৫, ভটভটি- ৬০/৬৫, ঢেড়স- ৪০/৪৫, বেগুন- ৬০/৬৫, আলু- ৪০/৬০, পোটল- ৬০/৬৫, লাউ- ৫০/৫৫, মিষ্টি কুমড়া- ৩০/৩৫, দেশি পটল- ৪০/৪৫, ঝিংগা- ৭০/৭৫, কাচা কলা- ৪০/৪৫, সজনা-১৩০/১৩৫, আদা-১৪০/১৪৫, রসুন-১৪০/১৪৫, কাচা মরিচ-১২০/ ১২৫, সুকনা মরিচ-৪৪০/৪৪৫, পিঁয়াজ-৭০/৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উৎপাদক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পন্য কৃষকরা যে দামে বিক্রি করে তার থেকে খুচরা ব্যবসায়িরা কয়েকগুন বেশি মুল্যে ভোক্তাসাধারন ক্রয় করছেন।

এ ব্যাপারে খুচরা বিক্রিতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের চড়া দামে পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে। পাইকাররা পন্যর দাম বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি সময়ে জ্বালানিতেল মুল্যবৃদ্ধির জন্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ ভাবে চাদা আদায়, যানজটের কারনে দ্রুত পচনশীল সবজি নষ্ট হওয়া ইত্যাদিকে দায়ি করছেন ব্যবসায়িরা।

মুদি মনোহরি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তেল, আটা, ময়দা, চিনি, সুজি ইত্যাদি পন্য প্রতি কেজিতে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে কয়েকগুন। বর্তমানে সয়াবিন তেল-১৮০/২০০ টাকায় দাড়িয়েছে, আটা-৫৫/৬২ থেকে টাকা, ময়দা-৬০/৬৫ টাকা, চিনি-১৪০/১৪৮ টাকা, সুজি-১০০/১১০ টাকা, মুসর ডাল-৯০/১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদি মনোহরি দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়িরা সরকারের যথাযত তদারকির অভাবকে দায়ী এবং জ্বালানি তেলের মুল্য বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে উর্ধগতি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন।

কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। সরকারের সঠিক তদারকি বা জবাবদিহি থাকলে ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট তৈরী করতে পারতো না। বেশি লাভের আসায় প্রতিটি বড় ব্যবসায়ীরা পন্য গুদামজাত করে বাজারে কৃতিম সমস্যা তৈরী করছে। আর সেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে সাধারণ দিনমজুররা।

একজন ভ্যান চালক আব্দুল গফুর (৫৩) ক্ষোভের সাথে জানান, ১০০ টাকায় কাচা বাজার হয় না বাহে! সারাদিন যে আয় করি তা দিয়ে পরিবারের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্হা হয় না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় যে কটি টাকা আয় হয় তাথে সংসার চলেনা। বাচ্চাদের পড়াশোনা করা তো দুরের কথা, খেয়ে পড়ে বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে।

মোটা চালের দাম একটু কমলেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। শিশুদের খাবার গুড়া দুধের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে কয়েকগুন।

এ দিকে মাছ-মাংস-ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিম এক মাসের ব্যবধানে হালিতে বেড়েছে ১০/১৫ টাকা। দেশি মুরগী কেজিতে বেড়েছ ৮০/১০০ টাকা, কর্ক মুরগী দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৮০/৪০০ টাকায়, বয়লার মুরগী হয়েছে-২৫০/২৮০ টাকা। গরুর মাংসের বাজার রয়েছে অপরিবর্তিত।

বিভিন্ন মাছ কেজিতে বেড়েছে ৮০/১০০ টাকা। মাঝারি ধরনের সিলভার কাপ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০/৩০০ টাকায়, গ্লাসকাপ-২৩০/২৫০ টাকা, রুই মাছ-৩৫০/২৮০ টাকা, কাতল মাছ- ২৫০/৩০০ টাকা, তেলা পিয়া মাছ- ২৪০/২৭০ টাকা, ইলিশ মাছ-৮০০/১২০০ টাকা, শিং মাছ-৪০০/৫০০ টাকা, টেংড়া মাছ-৪৫০/৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ-৮০০/১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন জাতের মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০/৩০০ টাকায়।

কাঁচা বাজার করতে আসা রিকসা চালক আজিজার রহমান (৪৩) জানান, যে টাকা আজ আয় করেছি চাউল- তেল নেওয়ার পর আর ১ শত টাকা আছে। এই ১ শত টাকা দিয়ে কি বাজার করবো বলেন। মাছ নেয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু সেটা আর হবে না। এভাবে কথাগুলো বলেন আজিজার রহমান।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোরল হুমায়ুন কবির বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীর দ্রব্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট থেকে বাহির করে আনতে পারলেই বাজারের পন্য সামগ্রি কিছুটা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। সরকারি ভাবে বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোয় যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যেত, তাহলে সাধ্যের মাঝেই সব কিছু থাকতো। তাই আমরা সরকারের প্রতি আহব্বান জানাবো বিশেষ করে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উপর নজর রাখতে।

 

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...