আজ ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভৈরবে দুই গ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আহত অর্ধশতাধিক, বাড়ি-ঘর ভাংচুর 

এম.আর রুবেল, ভৈরব প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ৫০ নারী ও পুরুষ আহত করেছেন এবং ১০টি বেশি বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়েছে।

এছাড়াও ঘটনায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
জানাযায়, ৬মে শনিবার রাতে গজারিয়া গ্রামের কাসেম মিয়া একদল লোকজন নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি বাঁশগাড়ী গ্রামে গেলে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বাকবিতাণ্ডর হয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়ে। এসময় গজারিয়া গ্রামের মোস্তুফা মিয়ার ছেলে কাসেম (৩০), জালাল উদ্দিনের ছেলে মোরাদ (২৬) ও অহিদ মিয়ার ছেলে আনোয়ার (৩০) আহত হয়। রাতেই এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে কাসেমের অবস্থা অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন।
এঘটনা জেরে আজ ৭মে রোববার বেলা ১০টার দিকে বাঁশগাড়ী ও গজারিয়া গ্রামবাসী দা, বল্লব, টেটা, ইটপাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ চারঘন্টার সংঘর্ষে আরো ২০ জনের বেশি নারী পুরুষ গুরুতর আহত হয়। এবং অন্যরা সাধারণ আহত হন। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ৬ মে রাতে বাঁশগাড়ী গ্রামের শিশু মেম্বারের বাড়ির শহীদ ও রফিক মিয়ার জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। একই বংশের রফিক ও শহীদ মিয়ার চাচা তোতা মিয়ার মেয়ের জামাই গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার কাসেম তার শ্বশুর বাড়িতে দলবল নিয়ে গিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। পরে শিশু মেম্বারের বাড়ির লোকজন জামাই কাসেম মিয়া ও তার দলবলের উপর আক্রমণ করে গুরুতর আহত করে।

এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ সময় কাসেম মিয়ার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করা হয়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ৭ মে রোববার সকাল ১০টা থেকে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ আহত হয়। গুরুতর আহতরা হলেন, নজরুল (২২), বাবু (১৩), মোস্তফা (৩৮), সিরাজ (৪০), দানিস (২৫), কবির (৪৫), জাকারিয়া (৫০), ইয়া হিয়া (২১), ইমন (২২), রিনা (৪৫), চাঁন মিয়া (১৮), জিল্লু (৫৫), সাইজ উদ্দিন (৪০), রুবেলা (৩০), গিয়াস উদ্দিন (৭৬)। এদের মধ্যে কবির কাজী ও মোস্তুফা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিশু মেম্বারের পক্ষে তার ছেলে জনি জানান, আমাদের বংশের রফিক মিয়া জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে বাঁশগাড়ী গ্রাম থেকে তার আত্মীয়দের খবর দিলে তারা এসে আমাদের গ্রামে ঝগড়া করে এসময় তারা আমাদের বাড়ির অনেক জায়গায় অগ্নিসংযোগ করেন এবং আমাদের বাড়ির ভাংচুর করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদীসহ নগদ ১২ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

একই গ্রামের কৃষক ইসলাম উদ্দিন জানান, জমি নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কিন্তু তারা আমার ফসলি জমির ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

কাসেম মিয়ার পক্ষে তোফাজ্জল মিয়া জানান, রাতে আমি আমার বন্ধু কাসেম এর সাথে ওই এলাকায় গেলে শিশু মেম্বারের লোকজন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে কাসেম গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এ বিষয়ে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শাহরিয়ার বলেন, বাঁশগাড়ী গ্রামে তাদের পারিবারিক ঝগড়া ছিল এতে করে অন্য এলাকার গজারিয়া গ্রামে আত্মীয়রা এতে যুক্ত হলে সংঘর্ষের বেপক আকার সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, গজারিয়া ইউনিয়নে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...