মনোহরদী প্রতিনিধি:
পূণরায় জীবিত হবে এমন বিশ্বাসে মৃত স্ত্রী শামিমা সুলতানা নাজমা তালুকদার(৫৬) এর লাশ খাটের নিচে রেখে ৬ দিন ধরে বসবাস করে আসছেন স্বামী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদারসহ তার পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী মারা যাবার পুরো ঘটনাটি এতদিন গোপন রাখলেও গত শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করে। এসময় মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার ৪ মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে মনোহরদীর পৌরসভার পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে।
জানা গেছে, মোক্তার উদ্দীন তালুকদার তার প্রয়াত স্ত্রী নাজমা তালুকদারসহ তাদের ৪ মেয়ে আটরশি দরবারের মুরিদ ছিল। নাজমা তালুকদার তার বাবার বাড়ি ধেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের ওই বাড়িতেই স্বামী ও ৪ মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। পরিবারটি নিজ থেকে প্রতিবেশিদের সাথে যোগাযোগ কম রাখতো। পীরের দেয়া অজিফা অনুযায়ী প্রতিদিনি ভোর ৩টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা জিকিরে মশগুল থাকতো। পরিবারের সদস্যরা জানায় গত ৫ জুন ভোরে জিকিররত অবস্থায় শামিমা সুলতানা নাজমা আক্তারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি পরিবারের সবাইকে বলে যায়,তার মৃত্যুর পর তিনি ৩/৪ দিন পর পূণরায় জীবিত হবেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়,পীরভক্ত এই পরিবারটির কর্তা মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার ৪ মেয়ে পূণরায় জীবিত হবেন এমন বিশ্বাসে কাউকে কিছু না জানিয়ে নাজমা আক্তার মারা যাবার পর থেকেই তার লাশ বসত ঘরের খাটের নিচে রেখে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিলেন। এতে ঘুনাক্ষরেও পাঁড়া প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজন এত বড় ঘটনা আঁচ করতে পারেনি। পরে ঘরের ভিতর থেকে দূর্গন্ধ ছড়ালে পাঁড়া প্রতিবেশিদের সন্দেহ হলে তারা পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশ শনিবার মধ্যরাতে ওই বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরের খাটের নিচ থেকে নাজমা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে। এসময় মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার মেয়ে ঘরের মধ্যে অবস্থান করছিল। তারা নাজমা আক্তারের মৃত্যুর পর ৬ দিন ধরে লাশের সাথেই বসবাস করে আসছিলেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার ৪ মেয়েকে থানায় নিয়ে আসে।
নিহতের মেয়ে মাহবুবা তালুকদার বলেন,তার মা কিছুদিন আগে বলছিল তার মৃত্যুর পর ৩/৪ দিন পর তিনি পূণরায় জীবিত হবেন এই বিশ্বাসেই তারা লাশ খাটের নিচে রেখেছিল।
মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন বলেন,শুনেছি পরিবারটি পীরের ভক্ত ছিল। তারা ওই এলাকার কারো সাথে তেম মিশতেন না। ওই বাড়ি থেকে প্রতিবেশিরা তীব্র গন্ধ পেয়ে দরজায় একাধিকবার নক করলেও দরজা না খুলায় পুলিশকে খরব দেয়া হয়। পরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করে। প্রকৃতপক্ষে ওই মহিলা কিভাবে মারা গেছেন তার পোস্ট মর্ডামের রিপোর্ট ছাড়া বলা মুশকিল।
মনোহরদী থানার ওসি মোঃ ফরিদ উদ্দীন জানান ,পরিবারটি পীরভক্ত ছিল। তারা প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত জিকির করতো। জিকির করা অবস্থায় নাজমা আক্তারের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট ও পরবতী তদন্তে বিস্তারিত বলা যাবে।
Leave a Reply