আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নরসিংদীর রায়পুরায় দেশি-বিদেশি মুদ্রার সংগ্রহশালা

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ 

৩৬ বছর আগে উপহারে পাওয়া দেশ-বিদেশি মুদ্রা জমানো শুরু করেন লোক সাংস্কৃতিক গবেষক ও সংগ্রাহক ফকরুল হাসান। এখন পর্যন্ত তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ১৩০টির অধিক দেশের কাগজি মুদ্রা, কয়েন, স্মারক, ডাক টিকিট, তামা-কাঁসাসহ নানান পুরোনো জিনিসপত্র। গড়েছেন মিনি মিউজিয়াম। নাম দিয়েছেন সংগ্রহশালা।

নরসিংদীর রায়পুরার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর অজপাড়াগাঁয়ে ফকরুল হাসানের বাড়িতে দোতলা ভবনে এই সংগ্রহশালা অবস্থিত। এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী দর্শনার্থীরা ভিড় জমান।

সরেজমিনে টেরাকোটা বাড়িটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে সৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ও রংবেরঙের বাতি, বিভিন্ন জাতের গাছসহ ফুলের বাগান। দৃষ্টিনন্দিত নানা কারুকাজে সূচিত রেলিং ও ঘরে প্রবেশের রাস্তা, রয়েছে বসার স্থান। বিভিন্ন বাণীখচিত কয়েকটি ফলক।

ফকরুল হাসান পেশায় একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী। তিনি এলাকায় একজন সমাজসেবক, লোকসংস্কৃতিক গবেষক ও সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুই। ১৯৮৮ সালে মামার দেওয়া প্রথম উপহার এক টাকার পাঁচটি নতুন নোট বইয়ে যত্নে রাখেন। এভাবেই স্বজনদের দেওয়া প্রতিটি ভালোবাসার উপহার জমাতে থাকেন বাক্সে। সেই থেকেই শখের বশে টাকার পাশাপাশি নানান পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করাই তাঁর নেশায় পরিণত হয়। এখন পর্যন্ত তিনি বিশ্বের ১৩০টির অধিক দেশের মুদ্রাসহ স্মারক, ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছেন বলে জানান ফকরুল হাসান ও তাঁর স্বজনেরা।

এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের স্মারক মুদ্রাসহ সংগ্রহে আছে দেশ-বিদেশের দিন-দিবসকে কেন্দ্র করে বের হওয়া স্মারক নোট। দেশ-বিদেশের বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন মুদ্রাসহ স্মারক, পুরোনো দিনের ক্যামেরা, ক্যাসেট, ঘড়ি, টেপরেকর্ডার, টেলিভিশন, টেলিফোন, তামা-কাঁসাসহ নানা জিনিসপত্র রয়েছে। তিনি ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও ক্রেস্ট। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন তাঁর বড় ভাই, স্ত্রী, পরিবারের সবাই।

কথা হয় দর্শনার্থী মো. মহসিন, এস এম শরীফ, তুহিন ভূইয়ার সঙ্গে। তাঁরা জানান, বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন মুদ্রাসহ বিশ্বের ১৩০টি দেশের মুদ্রা, ডাকটিকিট, স্মারক, তামা-কাঁসা, কুপিবাতি, হারিকেন, পুরোনো দিনের টেলিফোন ইত্যাদি তিনি সংগ্রহ করে রেখেছেন। প্রায় ৩৬ বছর ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা ও হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র সংগ্রহে গড়েছেন সংগ্রহশালা।

সংগ্রাহক ফকরুল হাসান বলেন, ‘১৯৮৮ সালে মামা হাফেজ মাওলানা কেরামত আলীর দেওয়া প্রথম উপহার এক টাকার পাঁচটি নোট জমানো থেকে সংগ্রহ করা শুরু। সেই থেকেই শখের বশে পুরোনো জিনিসপত্র, টাকা, ধাতব মুদ্রা, ডাকটিকিট, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যসহ দুর্লভ জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছি।’

‘ইংল্যান্ড, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানিসহ ১৩০টি দেশের বিভিন্ন প্রকার ও আকারের কাগজি নোট ও মুদ্রা এখন পর্যন্ত যা বের হয়েছে এর সবগুলো সংগ্রহ করে অ্যালবামে যত্নে রাখতে পেরেছি। শুরুতে এটা দেখে অনেকেই ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতেন, আবার অনেকে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই সংগ্রহশালায় শখের সংগ্রহের জিনিসগুলো দেখে বসে সময় কাটাতে পারব এটাই আমার ইচ্ছা।’ বলেন ফকরুল হাসান।

ফকরুল হাসান আরও বলেন, ‘একটা সময় আমি থাকব না। তবে এই সংগ্রহশালা থাকবে। গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী জাদুঘর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না বা কখনো দেখেনি। তারাসহ দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে এগুলো দেখবে, এই দেশের ও দেশের বাইরের পুরোনো দিনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে এটাই পরম পাওয়া। আগামীতে সংগ্রহশালা নতুন রূপে সাজিয়ে দর্শনীয় করার কাজ হাতে নিয়েছি। দর্শনার্থীদের মিউজিয়ামটি দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এটি প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা সাহস সহযোগিতা করেন বড় ভাই ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সহধর্মিণীসহ পরিবারের লোকজন।’

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...