আজ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার হলেন ঢাবি’র শাহীন

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ  

প্রথম চেষ্টাতেই ৪৩ তম বিসিএসে ক্যাডার হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের মো: শাহীন হোসেন। তিনি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মিরাকান্দা গ্রামের মো: শহীদ শেখের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শাহীন ছোট এবং একমাত্র ছেলে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠে শাহীন। শাহীন ছোট থেকেই বাবার কষ্ট লাঘব করে পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনা শেষ করেই দ্রুত কিছু করতে চেয়েছেন।

তিনি ছোট বেলা থেকেই মেধার লড়াইয়ে নিজের সেরাটা দেওয়া শুরু করেন। ক্লাস ওয়ানেই সকল পরীক্ষায় প্রথম হন। কথায় বলে, মর্নিং শোজ দ্য ডে৷ অর্থাৎ সূর্য দেখলেই বুঝা যায় দিনটা কেমন হবে। এই কথাটি যেন শাহীনের জন্য একদম উপযুক্ত। ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে ক্লাস টেন পর্যন্ত শাহীন প্রত্যেক ক্লাসে ক্লাস টপার হয়ে প্রথম স্থান ধরে রাখেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, এস এস সি ও এইচ এস সি তে জিপিএ ফাইভ সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর বা হার্ট ক্ষ্যাত বিজনেস ফ্যাকাল্টি তে সর্বোচ্চ বিষয় একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এ নিজের সফল অবস্থান অর্জন করেন।

শাহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর টিউশন এবং কোচিং এ ক্লাস নিয়ে নিজের সকল খরচ নির্বাহ করার চেষ্টা করেন এবং পাশাপাশি তার পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার পরিবারের দিন পরিবর্তন হতে শুরু করে।

বিবিএ পড়াকালীন শেষ পর্যায়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন। করোনার মহামারীর মাঝে তিনি ৪৩ তম বিসিএসে আবেদন করেন। পাশাপাশি এমবিএর পড়াশনা ও ক্লাস অনলাইনে চালিয়ে যান। করোনা মহামারীতে টিউশন ও কোচিং বন্ধ থাকায় তিনি একটি প্রাইভেট জবে জয়েন করেন।

জবের পাশাপাশি তিনি বিসিএস ও অনলাইনে মাস্টার্স এর পড়াশোনা চালিয়ে যান। জবে জয়েন করেও এমবিএর পড়াশোনা এবং চাকরি একই সাথে চালিয়ে যাওয়া যেন ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। তবুও তিনি পিছু হটেনটি।

কিছুদিন পরই ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ৪৩ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন । জানা যায়, ৪৩ তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন ৪ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে মাত্র ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রার্থী রিটেনের জন্য টেকানো হলে শাহীন এই ধাপ উৎরিয়ে যান। পরবর্তী ধাপে তিনি বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। রিটিনে মাত্র ৯ হাজার প্রার্থীকে ভাইভার জন্য টেকানো হলে এখানেও শাহীন টিকে যান। তিনি ভাইভার জন্য পড়াশোনা কর‍তে থাকেন। গত ২৬ শে ডিসেম্বর ভাইভার রেজাল্টে শাহীন চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পান।। উল্লেখ্য, একাউন্টিং এ মোট ৫০ জনকে সুপারিশ করা হয় যেখানে শাহীনের মেধাক্রম ২৯।

শাহীনের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, তার এবং তার পরিবারের ইচ্ছা তিনি প্রশাসন ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন।

মো: শাহীন হোসেনের এই পুরো বিসিএস জার্নিতে তার পরিবার তাকে কতটা সাহায্য করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা-মা সব সময় স্বপ্ন দেখেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। আমার স্ত্রী সব সময় মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন। তাই জার্নিটা পরিশ্রমের হলেও কঠিন বা অসম্ভব মনে হয়নি। পরিবারের আশা ও স্বপ্নই আমাকে এই পর্যন্ত এনেছে। ইংশা আল্লাহ চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিজেকে স্থান করে নিতে চাই। আশা করি নিজের ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা করার সুমহান ব্রত নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো।

ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবে তাদের উদ্দেশে শাহীন বলেন,
বিসিএস হলো মেধা ও ধৈর্যের সমন্বিত ফল। আপনার মেধা আছে কিন্তু ধৈর্য্য নেই তাহলে আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না।
ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করলে একদিন যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব। বিসিএসও তাই অসম্ভব নয়।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...