আজ ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফেসবুকে প্রেম অতঃপর—–


লেখক—-
মোঃদিদার হোসেন পিন্টু

নেভী ব্লো শাড়ী পড়াতে পিঠের বেশকিছু অংশ বেরিয়ে আছে চাঁদের মত। ব্রা এর কালো ফিতেটা সিংহের মত খামছে ধরে আছে ফর্সা চামড়ায়। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে,কাধের চামড়া কেটে কেটে মাংসের ভিতর ডুকে পরেছে দুস্ট ব্রা এর কালো ফিতেটা।

কফি হাউজের দিকে এগিয়ে আসছে মেয়েটি,পায়ে লুটুপুটি খাচ্ছে গাসফুল,খোঁপায় কাঁচা বেলি ফুলের মালা,আঁচলে দুল খাচ্ছে এক অজনা লাজুক বাতাস। সেই বাতাসেই ঝরঝরে পাতলা শাড়ীটা নাভীর উপর থেকে উড়ছে। গা ঘেঁষে পাশের চেয়ারে বসলো অপরিচিতা। পারফিউমের ঘ্রাণে এক অদ্ভুত নেশায় ভূমিকম্প হচ্ছে মগজের ভিতর। বহুবার তাকিয়েছে তার অলক্ষ্য, এ যেন সত্যিই এক দেবকন্যা।

সৃষ্টিকর্তা রং তুলির আঁচরে একটুও ভুল করেন নি। পরিপূর্ণ লাবণ্য পুস্পটিত হয়েছে তার প্রতিটি অঙ্গে। মনে মনে বলতে ইচ্ছে করছে,

চাঁদ চেঁহেরা তোমার প্রিয়া,
আঁখি দুটি গড়া যেন বিজলি দিয়া–
নয়নের এক চাঁহনীতে,
সাধ জাগে মরে যেতে ।।

এমনি আরো কতকথা, কত স্বপ্ন, ভাবতে ভাবতে প্রতিদিনের মত এক সময় ঘুম এসে ভীড় করে রতনের চোখের পাতায়।!

হাই
…. –কি করেন আপনি?

হঠাৎ অপরিচিত আইডি থেকে এমন মেসেস।
প্রোফাইল টা চ্যাক করলেন রতন, হয়তোবা কোন নারীরই হবে।কেননা, আইডিতে শুধুমাত্র পুতুল আর ফুলের ছবি।

এমনিতেই রতন উত্তর দিলেন, গল্প লিখি –কল্পনায় যা আসে,তাই লেখি।

উত্তরে বললো, –আপনার কল্পনা গুলো অনেক সুন্দর।
রতন তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, –আপনার পিক নেই কেনো প্রোফাইলে? – আমার ইচ্ছে নেই তাই প্রোফাইলে পিকও নেই।

রতন বললো –এতো ভাব নেন কেনো?

মেয়েটা মেসেজে বললো, –ভাবের টাংকি ফুল,তাই একটু খরচ করছি।

রতন একটু বিরক্ত হয়ে মেসেজ দিলো হুম ভালো। –থাকেন আপনি আপনার ভাব নিয়ে। বাই।।।

এইভাবেই রতন আর অপরিচিতার কথোপকথন শুরু হয়। রতন ১৯ বছরের এক টগবগে যুবক। মাঝারি মাপের একজন অটো রিক্সার ড্রাইভার । বাপের রিক্সা,যখন টাকার দরকার হয় মাঝেমধ্যে রিক্সা নিয়ে বের হয় রতন।

অপরিচিতার মতো অনেকেই এইভাবে তাকে মেসেজ করে প্রশংসায় ভাসায়।
রতনের মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ শৈশবকাল থেকেই। শ্যামলা বর্ণের চেহেরাটা ডাগর ডাগর দুটি চোখ রতনের। পড়াশোনা করেছে ৫ম শ্রেণী পযর্ন্ত। সংসারের চাপে আর পড়াশোনা হয়নি। রতনের বন্ধুরা সবাই কলেজে পড়ে, ওদের হাতে স্মাট ফোন দেখে রতন ও বাইনা ধরে তার মার কাছে একটা স্মাট ফোন কিনে দিতে।

কোন উপায় না পেয়ে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটা মোবাইল কিনে দেন রতনের মা।

কয়েক মাসের মধ্যই রতনের হাজার খানেক ফ্রেন্ড হয়ে যায়। তারই মাঝে অপরিচিতা নামে এক আইডির মেয়ের সাথে প্রতিদিনই চ্যাট হতে থাকে। চ্যাট করতে করতে রাত শেষ হয়ে ভোর হয় তবু যেন চ্যাট শেষ হতোনা।

কুরিয়ার মাধ্যমে রতন অনেক গিফট পাঠিয়েছে। একদিন গিফট পাঠাতে গিয়ে অপমান হয়েছে ছোট বোনের কাছে কারন,ছোট বোনের স্বর্ণের চেইন চুরি করে পাটিয়ে ছিলো।
আজ প্রায় এক বছর অপরিচিতার সাথে রতনের ফেসবুকে মেসেন্জারে প্রেম। এরই মাঝে রতন শিখে ফেলেছে গাঁজা সেবন করা, বাবা নামে টেবলেটও এখন মাঝেমধ্যে পকেটে থাকে। এইতো গত কদিন আগে ছিনতাই করতে গিয়ে মাইর খেয়ে হাসপাতালে কাটিয়েছে।
এখন রাত নেমে এলে ছিনতাই আর চুরি করতে নেমে যায়। ছিনতাই নিয়মিত পেশা হয়েছে।

অবসরে অপরিচিতার সাথে মেসেন্জারে চ্যাট, এই ভাবে চলছে প্রায় বছর খানেক।

রতন অনেকবার অপরিচিতাকে বলেছে, তোমার ফোন নাম্বার দাও কিংবা একদিন দেখা হোক তুমি এমন কেন?? ওপাশ থেকে মেসেন্জারে উত্তর আসতো এত উতলা হচ্ছ কেন? আমাদের প্রেম সত্য, সময় হলে ঠিকই একদিন দেখা করবো।
তুমি এমন করোনা লক্ষ্মিটি।
আমার ফাইনাল পরিক্ষাটা শেষ হলে অবশ্যই দেখা হবে সোনা,আর কত রকম মন ভুলানো কথা লেখতো। এসব পড়ে পড়ে রতনের মন গলে যেতো, অন্ধের মত বিশ্বাস অপরিচিতার প্রতি। মাঝে মধ্যে বিকাশে টাকাও পাঠাত রতন। যে দিন অপরিচিতার সাথে রতনের প্রথম মেসেজ আদান প্রদান হয় সেইদিন থেকে প্রতিরাতেই রতন স্বপ্ন দেখেন……

নেভি ব্লু শাড়ী পরে আর বিদেশি পারফিউম গায়ে লাগিয়ে এক পরী এসে তার পাশে বসে কফি খাবে, রতনের হাত দুটি ধরে বলবে, বড় ভালবাসি তোমায়।
আ- হা!! কত মধুর মধুর স্বপ্ন দেখে রতন। সকালে ঘুম ভাংতেই শিমুল নামে এক বন্ধু এসে দুই হাজার টাকা ধার চাইলো কিংন্তু রতন দেয়নি আর দিবেই বা কেন?? অপরিচিতাকে যে আজ পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। শিমুল খুব কাছের মানুষ ও স্কুলের বন্ধু। একদম রতনদের বাড়ির সামনের বাড়িটা শিমুলদের। শিমুল কলেজে পড়ে আগের মত আর রতনের সাথে মিশে না। শিমুল মন খারাপ করে চলে গেছে সেই কখন। হঠাৎ মোবাইলে শব্দ হলো বুজতে বাকি রইলো না অপরিচিতার মেসেস কখন পাঠাবেন টাকা??

রতন মনে মনে ভাবলো আজ একটু জোর দিয়ে বলে দেখি, দেখা করবে কিনা? আর দেখা না করলে টাকা পাটাবো না এক প্রকার সাহস করে অপরিচিতাকে মেসেজ দিলো, তুমি যদি কাল দেখা না করো তাহলে আর কখনো টাকা পাঠাবো না,এমন কি আমি তোমার বিরহে আত্মহত্যা করবো।

ওপাস থেকে অপরিচিতার মেসেজ আসলো, আগামীকাল সকাল এগারটায় পার্কে আসবো কথা দিলাম…।।

অপরিচিতাকে দেখার আনন্দে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি । ভোর হতে এখনো অনেক বাকি। হুতম পেঁচার ডানা ঝাপটানো শব্দ এখনো শুনা যায়। স্বপ্নের রাজকন্যার সাথে দেখা হবে।
গতকালই নতুন পেন্ট আর টি শার্ট কিনেছিলো সাথে কিনেছিলো বিদেশি পারফিউম। বার বার শরীরে পারফিউম দিচ্ছে আর ঘ্রাণ নিচ্ছে। অপরিচিতার জন্য কিনেছে অনেক কিছু। ভোর হতেই রতন পার্কের ভিতর চলে আসলো।

বুকের বেতর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে লাগলো। প্রথম দেখায় কি বলবো?? ভালবাসি তোমায়?? না না এটা সেকালের ভাষা। এমন বহু ভাবনা মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে রতনের। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অনেক দিনের সাজানো গোছানো কথা গুলো। পকেটে থাকা গাঁজার স্টিক গুলো একটার পর একটা টানতে লাগলো, চোখ গুলো আগুনের মত লাল হয়ে গেছে, মাথাটা ঝিমঝিম করছে আজ কেন মাথাটা এমন করছে বুঝতে পারছেনা রতন।কেননা গাঁজা তো প্রতিদিনই সেবন করে এমন তো আর কখনো হয়নি। অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে দেখলো অপুরুপ সুন্দরী এক নারী তারদিকে এগিয়ে আসছে, রতন নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।

 
টলমল করে হেটে গিয়েই হঠাৎ মহিলাটির হাত ধরে বসলো। আচমকা এমন ঘঠনা ঘটবে কল্পনাও করতে পারিনি মহিলাটি। তাই ভয়ে চিৎকার করে ছিনতাইকারি বলে ডাকতে লাগলো। আশেপাশের মানুষগুলো জুড়ো হয়ে মারতে লাগলো রতনকে, কে যেন মাথার পিছন দিকে বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলেছে। মাথা ফেঁটে রক্ত ঝরছে অনেক, কথা বলতে পারছে না রতন, নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে তার প্রতিটি রক্ত কণিকা, নাক মুখ দিয়ে প্রচন্ড রক্ত ঝরছে, আর বিড়বিড় করে বলছে অপরিচাতা। দুর থেকে এত মানুষের ঝটলা দেখে এগিয়ে আসলো শিমুল। সবাই বলাবলি করছে ছিনতাই কারি। রক্তে মুখ চেনা যাচ্ছেনা বিড়বিড় করে কি যেন বলছে, হঠাৎ শিমুলের কানে অস্পষ্ট শব্দ আসলো… অপরিচিতা।
শিমুল বাকরদ্ধ হয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,রতনের মাথাটা কুলে নিয়ে বলতে লাগলো, দোস্ত আমাকে ক্ষমা করিস। আমিই অপরিচিতা, তোর সাথে মজা করতে গিয়ে এমন হবে ভাবতে পারিনি। এরই ভিতর রতনের মাথাটা হেলে পরলো একদিকে..

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...