আজ ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভালবাসার নীলপদ্ম কবি- শহীদ কায়সার

NARSINGDIPOST এর প্রধান সম্পাদকের লেখা
……………………………………………………………………অনেক অনেক রাতে যখন আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল অপূর্ণ কোন স্বপ্নদৃশ্যে তোমাকে দেখে যেন কয়েক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো বাস্তব হয়ে তুমি বসে আছো আমার পাশে।
বালিশের অসমান্তরাল উঁচু নিচু ধাপগুলো
পেরিয়ে দৃষ্টির সীমানায় তোমাকে হাতড়ে বেড়ানোর
ব্যর্থ চেষ্টা।কল্পনার জগত থেকে যখন বাস্তবে ফিরে
এলাম নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগছিল আমি বুঝতে
পারলাম আজও বুকের বাঁপাশে হৃদয়ের স্পন্দনে তোমাকে
অনুভব করি আমি।ঘুমহীন চোখে যখন হলের বিশাল
বারান্দায় এসে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ শুনলাম হাতদুটো
বাড়িয়ে বৃষ্টির জলের ঝাপটায় চেতনায় ফিরে এসে
আমার মনটা যেন অবশ হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যে।
অতীতের স্মৃতি হাতড়ে আমি ভাবতে লাগলাম তোমার
সাথে পরিচয়ের প্রথম বেলার স্মৃতি।
সেদিনও বৃষ্টি ছিলো।বর্ষাস্নাত কোন এক রাতে এই
হলের বারান্দায় দাঁড়িয়েই তোমাকে প্রথম ফোন করা।
তোমার কণ্ঠ শুনেই বুকের মধ্যে বড় ধরনের ধাক্কা
খেয়েছিলাম আমি।অনেক অনুরোধের পর অপরিচিত
মানুষটির সাথে মুঠোফোনের কয়েক মুহূর্তের আলাপন
পাল্টে দিয়েছিলো আমার জীবনধারা।পরেরদিন ক্লাস
লেকচারগুলো কেমন যেন শব্দহীন হয়ে গিয়েছিলো,৪৫
মিনিটের লেকচারকে মনে হয়েছিল কয়েক ঘণ্টাব্যাপী
যেন এক সেমিনার।এরপর আমাদের যোগাযোগ বাড়তে
থাকলো মিষ্টি কথামালায়।প্রতিদিন অজস্র কথা হতো
আমাদের।আমার কথাগুলো ধীরে ধীরে স্বাপ্নিক আর
রোম্যান্টিক হয়ে উঠেছিলো তোমার কাছে।
তুমি মেডিকেল কলেজ এ পড়তে তাই রাত জেগে পড়তে
হতো তোমাকে।প্রায় রাতেই আমি অপেক্ষার প্রহর
গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম।ফোন ধরতে পারতাম না বলে
তোমার সে কি অভিমানই না হতো। পরেরদিন ঠিক ঠিক
ফোন ধরবো বলেই রেহাই পেতাম আমি।সকাল আটটার
তোমার ক্লাসটা কেমন যেত জানি না তবে আমার
ক্লাসটা ভালো যেত না সেদিন,স্যারকে যে কি যা তা
বলতাম সকালবেলা ক্লাস দেওয়ার জন্য।পড়াশুনার
চাপের মাঝেও তোমার সাথে যে কয়েক মুহূর্ত কথা হতো
সব ক্লান্তি যেন ঝরে যেত এক নিমিষেই।কখন যে তুমি
আমার জীবনের খুব কাছের একজন হয়ে গিয়েছিলে
বুঝতেই পারিনি।আমিও হয়ত খুব কাছের একজন হয়ে
গিয়েছিলাম তোমার।মনে আছে তোমার কত পাগলামি
না করতাম আমি।কথা বলতে বলতে যখন ফোনের টাকা
শেষ হয়ে যেত,সেই গভীর রাতে হলের বন্ধুদের রুমে রুমে
তল্লাশি করে কার্ড খুঁজতাম।যদি খুঁজে না পেতাম
রাতের নির্জন যান্ত্রিক শহরে ভয়হীন চোখে চলে
যেতাম কার্ড এর দোকানের খোঁজে।তুমি কত করে বলতে
যেতে হবে না তবু যেতাম।আমি বুঝতে পারতাম
ভালবাসার কথামালা শেষ হয়নি তখনও।কত রাত যে কথা
বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়তে তুমি,তোমার ঘুম জড়ানো
কণ্ঠটা কতটা প্রিয় যে হয়ে উঠেছিলো আমার কাছে।
এক শহরে থাকতাম না বলে খুব একটা দেখা হতো না
আমাদের তবু কখনও মনেই হতো না আমাদের দূরত্ব
আমাদের ভালোবাসাকে আলাদা করতে পেরেছিল।তবুও
প্রতিটি সন্ধায় যখন কোলাহল মুখর এ ক্যাম্পাসে এক
কোনায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম মাঝে মাঝে
সীমাহীন নির্জনতায় হারিয়ে যেতাম।মেয়েদের হলের
বাহিরে যখন অপেক্ষারত কোন যুবকের চোখে চোখ
পড়তো এক পলকের জন্য হলেও ভাবতাম তুমি যদি এই
হলেই থাকতে।
টিএসসির ফুচকা আর চটপটিতে তোমাকে মিস
করতাম,বইমেলায় স্টলে স্টলে ঘুরতে থাকায় তোমাকে
মিস করতাম,পহেলা বৈশাখের উৎসবমুখর পরিবেশের
হাজার মানুষের ভীরেও তোমাকে মিস করতাম,রাতে
হলে ফেরার পথে ফুলার রোডের প্রেমিক প্রেমিকাদের
ভালোবাসার চাহনিতে তোমাকে মিস করতাম।হয়তো
বর্ষার প্রথম দিনে কদমফুল হাতে ভালোবাসার কথা
জানাতে পারতাম না আমি,কিংবা কোন কবিতা
পাঠের আসরে তোমার চোখে চোখ রেখে বলা হত না
ভালবাসি,কোন বৃষ্টিভেজা দুপুরে এক ছাতার নীচে
পথচলা হত না আমাদের তবু বিশ্বাস কর একবারও মনে হত
না তুমি পাশে নেই আমার।
কোন এক পূর্ণিমার রাতে যখন আকাশের এক কোনায়
চাঁদটা উঠত আমরা দুজন একসাথেই তো চাঁদটা দেখতাম
পাশাপাশি হয়তো দেখা হতো না তবু একি আকাশের
নিচেই তো ছিলাম আমরা।কোন এক সন্ধায় তোমাকে
যখন খুব দেখতে ইচ্ছে করতো আমি ফোন করে বলতাম
তোমার কি কোন নীল রঙের শাড়ি আছে যদি থাকে তুমি
কি এখনি নীল রঙের একটা শাড়ি পরে তোমাদের ছাদে
উঠে কার্নিশ ধরে নীচের দিকে তাকাবে?আমি
তোমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে
যাব।এমনটা কোনদিন হতো না তবু তুমি যত্ন করে শাড়ি
পরে চুল বেঁধে চোখে কাজলের ছোঁয়া লাগিয়ে ছাদের
কার্নিশ ধরে দাঁড়াতে,কত ছেলেমানুষী না ছিল
আমাদের।
মনেপড়ে প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতি।মেডিকেল কলেজের
রাস্তার এক পাশে আমি আর অন্যপাশে তুমি কত
উৎকণ্ঠা, কত উৎচ্ছাস।প্রথম দেখা আমার ভালোবাসার
মানুষটিকে।সেদিন আমরা একসাথে পাশাপাশি
হেঁটেছিলাম অনেকক্ষণ।কত কথা,না বলা
অভিব্যক্তি,কত হাসাহাসি।বটগাছের এক পাড় বাঁধানো
বৃত্তে বসে সামনা সামনি প্রথম বলা আমি তোমাকে
ভালবাসি,তুমি আমাকে বিয়ে করবে?তুমি অনেক
হেসেছিলে।আবার হাঁটতে হাঁটতে তোমার হাত ধরতে
চাওয়া,অনেক সংকোচের পর কয়েক মুহূর্তের জন্য
তোমার হাতের স্পর্শ পাওয়া।একসাথে প্রথম তোমার
সাথে রিকশায় চড়ার অনুভূতি,এক ইঞ্চি দূরত্বে থাকা
তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে আমার ভিতরে তখন কি ঝড়
বয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসা নাকি টের পাওয়া যায়,তুমি
কি সেদিন টের পেয়েছিলে?
মেঘের বিকট শব্দে বাস্তবতায় ফিরে আসি আর মনে মনে
ভাবতে থাকি কি এমন ক্ষতি হত বিধাতার যদি তুমি
আমার হতে একটা জীবনে এতটা ভালোবেসে আমার যে
আর কিছুই চাইবার ছিল না।আমার ভিতরটা শূন্যতায় ভরে
উঠে যতবার ভাবি এই তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি।
আস্তে আস্তে তুমি হারিয়ে যাবে কোন এক অজানা
ঠিকানায়।আমার ভালোবাসার আকাশটা আরও নীল হয়ে
যাবে বেদনায়,আমার ভালোবাসার রংধনু গুলো আস্তে
আস্তে মুছে যাবে।আমার কান্নাগুলো আজ বড় অর্থহীন
লাগে তোমার কাছে,তোমার অপারগতা গুলো নীরবে
কাঁদায় তোমাকে।আমি ঘুমহীন চোখে তোমার বলতে না
পারা অপারগতার উত্তর খুঁজি আর প্রতিদিন বলি তবুও
ভালোবাসি তোমাকে।আমার ভালোবাসার সবকটি
নীলপদ্মই যে তোমার কাছে…

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...